বায়োফ্লক প্রযুক্তিতে মাছ চাষের সুবিধা এবং অসুবিধা

বিশ্বের খাদ্যের অন্যতম বড় উৎস মাছ মাছের চাহিদা দিনের পর দিন ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাশাপাশি তাল মিলেয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে মাছ চাষের ব্যবসা। পুরানো পদ্ধতিতে মাছ চাষের খরচ অনেক বেশি যার ফলে লস খেতে হয় অনেক ব্যবসায়ীকে। মাছ চাষের ব্যবসার খরচ কমাতেই চিন্তাধারা করা হয়েছে নতুন পদ্ধতি। আর এই নতুন পদ্ধতিতে মাছের চাষের মধ্যে একটি প্রযুক্তি হল বায়োফ্লক। আজকাল এই নামটির সঙ্গে অনেকই পরিচিত।

বায়োফ্লক

বায়োফ্লক প্রযুক্তিতে মাছ চাষের ফলে প্রচুর লাভ বৃদ্ধি পাছে এবং কমছে খরচের পরিমাণ। তবে আপনি যদি বায়োফ্লক প্রযুক্তির মাধ্যমে মাছ চাষের কথা ভেবে থাকেন তাহলে অবশ্যই আজকের নিবন্ধ থেকে আপনার জেনে নেওয়া উচিত বায়োফ্লক প্রযুক্তিতে মাছ চাষের সমস্ত সুবিধা ও অসুবিধা।

আরও পড়ুন| বর্তমান আর্থিক বাজারঃ স্টক মার্কেটে শেয়ার কীভাবে কেনা বেচা হয়

বায়োফ্লক কি?   

বায়োফ্লক কি

বায়োফ্লক একটি তুলনামূলকভাবে নতুন প্রযুক্তি যা জলজ চাষের জন্য বিশেষত উৎপাদনশীল। বায়োফ্লক প্রযুক্তি মাছ চাষের জন্য টেকসই এবং পরিবেশ- বান্ধব প্রক্রিয়া যা খামারের কাঠামোর জন্য মাইক্রোবিয়াল প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য সৃষ্টির পাশাপাশি জলের গুণগত মান বজায় রাখে এবং ক্ষতিকারক রোগজীবাণু নিয়ন্ত্রণ করে। এই প্রযুক্তি জলের মধ্যে মধ্যে কার্বন-নাইট্রোজেন চক্রকে নিয়ন্ত্রণ করে জলে একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় রাখে এবং ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ও একক কোষের জীবের বিকাশকে ত্বরান্বিত করে যা জৈব রাসায়নিক চক্রের সূচনা করে।

আরও পড়ুন| অনলাইন ব্যবসা: ৫ টি অনলাইন ব্যবসার আইডিয়া

জলের উচ্চ ঘনত্ব এবং জলজ প্রাণী পালনের জন্য বর্জ্য পানির চিকিৎসার প্রয়োজন যা জলজ জীবের জীবনমানকে উন্নত করবে অর্থাৎ মাছের মতো জলজ প্রাণীর সুস্থ ও সমৃদ্ধ বৃদ্ধি নিশ্চিত করে। মাছ চাষের ৬০ শতাংশ খরচ খাবারের উপর হয়। আর বায়োফ্লক প্রযুক্তির মাধ্যমে মাছ চাষের জন্য নাইট্রোজেনাস বর্জ্যকে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারে পরিণত করে যার ফলে মাছ চাষের ব্যয় কম হয়।

পুরানো পদ্ধতিতে মাছ চাষে কি কি সমস্যা হয়?

পুরানো পদ্ধতিতে মাছ চাষে কি কি সমস্যা হয়

ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা এবং খাদ্যের প্রতি চাহিদা বৃদ্ধির সাথে মৎস্য শিল্পে বিশাল চাপ বেড়েছে। মাছ চাষের ব্যবসায় পুরানো পদ্ধতি অনুসরণ করে উৎপাদন করলে চাহিদার সামনে হার মানায়। পুরানো পদ্ধতিতে জলাশয় তৈরি করে প্রয়োজনীয় পরিপূরক সরবরাহের সাথে মাছ উৎপাদন পদ্ধতিটি একটি প্রাকৃতিক উপায়। যার উৎপাদন চাহিদার কাছে হার মানে।

পুরানো পদ্ধতিতে মাছ চাষের করতে গেলে মাছের খাবারে প্রচুর ব্যয় হয়। বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করলে খাবারের ব্যয় তুলনামূলকভাবে কম হয়।

চাহিদা অনুযায়ী জলে মাছের উৎপাদন বাড়ানো হলে অক্সিজেনের হ্রাস পায় এবং জলের গুণগত মান নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়াও জলের বর্জ্য পরিচালনা ও পরিষ্কার ব্যয়বহুল হয়ে পড়ে। এই সমস্ত সমস্যা সমাধানের জন্য বায়োফ্লক আবিষ্কার ও প্রয়োগ করা হয়েছিল।

আরও পড়ুন| অল্প পুঁজিতে লাভজনক ব্যবসা: ২৫ টি অল্প পুঁজিতে ব্যবসার আইডিয়া

মাছ চাষের জন্য বায়োফ্লক প্রযুক্তি কেন উপযুক্ত?

মাছ চাষের জন্য বায়োফ্লক প্রযুক্তি কেন উপযুক্ত?

মাছ চাষের জন্য বায়োফ্লক প্রযুক্তির উপযুক্ত কিনা তা নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়েছিল। জলের গুণগতমান এবং অক্সিজেনের স্তরের জন্য কয়েকটি পরীক্ষা করা হয়েছিল এবং দেখা যায় যে বায়োফ্লোক পদ্ধতি প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের স্তর, খনিজ ,পি এইচের স্তর ইত্যাদি বজায় রাখতে কার্যকর ছিল। এছাড়াও দেখা গেছে এই প্রযুক্তি ছাড়া মাছের গড় সাইজ হতে প্রায় ৪৫ দিনের বেশি সময় লাগে তবে বায়োফ্লক প্রযুক্তিতে মাছের চাষ করলে ৩০ দিনের মধ্যে তাদের গড় আকারে পৌঁছেছে।

মাছ চাষের জন্য একটি ভারসাম্য পরিবেশ বজায় রাখা যায় এই প্রযুক্তির মাধ্যমে। পাশাপাশি জলের গুণগত মান বজায় রাখে এবং মাইক্রোবিয়াল প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার তৈরি করে। মাছ চাষের জন্য বায়োফ্লক প্রযুক্তি ব্যবহার করলে মাছ চাষের জন্য প্রয়োজনীয় খরচ অনেক কম হয়।

পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে পুরানো পদ্ধতিতে মাছ চাষের চেয়ে বায়োফ্লক প্রযুক্তিতে মাছ চাষের লাভের পরিমাণ ২৩-৩০ শতাংশ বেশি ছিল। এই প্রযুক্তিতে কম জলে বেশি পরিমাণ মাছ উৎপাদন করা যায়। এটা প্রমাণিত হয়েছে বায়োফ্লক প্রযুক্তি কেবল উৎপাদন বৃদ্ধি করে না বরং প্রয়োজনীয় সময় হ্রাস করে নেট মুনফার হার বাড়ায়। অর্থাৎ মাছে চাষ ব্যবসায় বায়োফ্লক একটি লাভজনক প্রযুক্তি।

আরও পড়ুন|  জেনে নিন অনলাইনে শেয়ার ব্যবসা কীভাবে করবেন

বায়োফ্লক প্রযুক্তিতে মাছ চাষের সুবিধা কি?

বায়োফ্লক প্রযুক্তিতে মাছ চাষের সুবিধা

প্রযুক্তি কেবল মুনাফাকে বাড়িয়ে তুলেছে না বরং জলজ প্রাণীদের জন্য আরও ভাল সেবা দিয়েছে। এখানে বায়োফ্লোক প্রযুক্তির কিছু সুবিধা রয়েছে।

  • বায়োফ্লক প্রযুক্তি মাছ পালনের জন্য একটি পরিবেশ বান্ধব পদ্ধতি। এটি পরিবেশ এবং জলজ প্রাণীদের পক্ষে কম ক্ষতিকারক।
  • বায়োফ্লক জমি এবং জলের দক্ষতা উন্নত করার এবং সীমিত জলে বেশি মাছের উৎপাদন করে। যেহেতু বেশি মাছের জন্য কম জায়গার প্রয়োজন হবে তাই জমির ব্যবহার আরও হ্রাস পাবে। ফলে উৎপাদন ব্যয় আরও হ্রাস পাবে।
  • মাছ চাষের জন্য খুব সীমিত পরিমাণ জল ব্যবহার হয়।
  • বায়োফ্লক প্রযুক্তির মাধ্যমে জলের বর্জ্যকে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্যে ব্যবহার করার ফলে বর্জ্য উৎপাদন এবং এর পরিচালন ব্যয় হ্রাস পাচ্ছে।
  • বায়োফ্লক জল দূষণ হ্রাস করতে সহায়তা করে যা জলজ প্রাণীদের জীবনে একটি বড় সমস্যা। এটি ক্রমবর্ধমান রোগজীবাণু এবং তাদের ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিও হ্রাস করে।
  • বায়োফ্লক প্রযুক্তি কম ব্যয়বহুল এবং উচ্চ উৎপাদন ব্যয়ের প্রয়োজন হয় না এবং নেট মুনফা বাড়ায়।
  • বায়োফ্লক বর্জ্যগুলিকে প্রোটিন সমৃদ্ধ ফিডে রূপান্তর করে জলজ প্রাণীদের খাওয়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যয় হ্রাস করে।

আরও পড়ুন| ব্যবসার নিয়ম কানুনঃ ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য নিয়ম কানুন

বায়োফ্লোক প্রযুক্তি ব্যবহারের অসুবিধা:

বায়োফ্লোক প্রযুক্তি ব্যবহারের অসুবিধা:

বায়োফ্লক পদ্ধতি মাছ চাষের প্রচুর সুবিধা রয়েছে। তবে এই পদ্ধতিতে চাষ করার আগে এর কয়েকটি অসুবিধাগুলি জেনে নেওয়া যাক-

  • মিশ্রণ এবং বায়ুচালনের জন্য শক্তির প্রয়োজন বৃদ্ধি পায়।
  • এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করে দেখা গেছে যে জল শ্বসনের হারের সাথে সাথে প্রতিক্রিয়ার সময় হ্রাস পায়।
  • শুরুর সময়কালীন প্রচুর সময় লাগে।
  • ক্ষারীয় পরিপূরক প্রয়োজন।
  • বায়োফ্লোক পদ্ধতি নাইট্রেট জমে থেকে দূষণের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
  • সূর্যের আলো উদ্ভাসিত সিস্টেমগুলির জন্য এটি ক্ষতিকারক হতে পারে।
  • পদ্ধতিটি কিছুটা কৃত্রিম হওয়ায় এর জন্য প্রচুর যত্ন নেওয়া এবং পরিচালনা প্রয়োজন। যা ফ্রেশ ওয়াটার পদ্ধতিতে হয় না।

আরও পড়ুন| শেয়ার বাজার কাকে বলে এবং তার সম্পর্কিত ধারণা

বায়োফ্লক প্রযুক্তি মাছ উৎপাদনে ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে রয়েছে। অনেক লোক রয়েছে যারা এই পদ্ধতিতে বিনিয়োগ করেছেন এবং তারা উৎপাদন ও লাভের উন্নতি হওয়ায় এটি থেকে প্রচুর আয় হয়েছে। এই পদ্ধতি মাছ উৎপাদনের জন্য প্রচুর সময় সাশ্রয় করেছে। এক কথায় বলতে গেলে একটি নির্দিষ্ট সময়ে মাছগুলি বহুবার বৃদ্ধি পায়। তাহলে বলাই যায় বায়োফ্লক পদ্ধতি মাছ উৎপাদন এবং লালন পালনের জন্য লাভজনক।

সচরাচর জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন উত্তরঃ

Q. বায়োফ্লক প্রযুক্তিতে মাছ চাষ করলে কি খরচ কম পড়ে?

A. এই পদ্ধতি কিছুটা কৃত্রিম হওয়ার কারণে প্রাকৃতিক উপায়ে মাছ চাষের তুলনায় খরচ কম।

Q. বায়োফ্লক প্রযুক্তিতে কি কি মাছ চাষ করা যায়?

A. রুই,মাগুর, তেলাপিয়া, পাবদা, চিংড়ি সহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করা যায়।

Q. বায়োফ্লক প্রযুক্তিতে খাবারের খরচ কি কম হয়?

A. হ্যাঁ, বায়োফ্লক পদ্ধতিতে খাবারের খরচ কম হয়। যেহেতু মাইক্রোবিয়াল প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার তৈরি করে।

Q. বায়োফ্লক প্রযুক্তিতে জল পরিবর্তন কি খুব বেশি করতে হয়?

A. না, বায়োফ্লক প্রযুক্তিতে ট্যাংকে জল খুব কম পরিবর্তন করতে হয়।

2 Comments

  1. বায়োফ্লক আমাদের মৎস্যশিল্পের জন্য আশীর্বাদ, ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য, এ সম্পর্কে আমরা একটি পরিপূর্ণ আর্টিকেল প্রকাশ করেছি, ঘুরে আসার আমন্ত্রণ

Leave A Reply

Please enter your comment!
Please enter your name here